আমি সুমন হালদার, বয়েস ১৮, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি , আমার হাতে এখন অগাধসময়, আমার বাবা সরকারি চাকরি করেন , বাবার সততার জন্যে এখনো, ২০ বছর পরেও একই পোস্টে কাজ কোরেচলেছেন। বেশ হিসেবে করে সংসার চালাতে হয় বাবা–মা কে। এটাই সুখের যে আমরা যে বাড়িতে বাস করি, আমারঠাকুরদা বানিয়ে ছিলেন, সেটির অবস্থাও খুব ভালো নয়।
বেশ কিছু জায়গার প্লাস্টার উঠে গেছে , রঙ তো বহু বছর হয়নি অর্থের অভাবে। আমরা দু ভাই–বোন আমার বড়দিদি, দুজনের ভিতরে ৮ বছরের তফাৎ, বছর খানেক আগে বাবা তার বিয়ে দিচ্ছেন, আমার জামাই বাবু ও তারবাড়ির লোকজন খুবই ভালো। শুধু তারা একটি শিক্ষিত সুন্দরী মেয়ে চেয়েছিলেন নিজের একমাত্র ছেলের বিয়েদেবেন বলে।
সেই অর্থে আমার দিদির রূপ দেখে ওদের বাড়ির সবাই পছন্দ করে ফেলেন ও একমাসের মধ্যে দিদি কে বিয়ে দিয়েওনাদের বাড়ি নিয়ে গেলেন। আমার বাবার যা সামর্থ ছিল সেই মত দিদিকে ও জামাই বাবুকে দিয়েছেন আর তা নিয়েওঁদের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ জানাননি বা দিদিকেও কোনো খোটা দেননি। এযুগে এরকম মানুষপাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।
একদিন আমার মা বললেন – সমু, দেখ তুই তো এখন বড় হয়েছিস সবই তো বুঝিস তোর দিদির বিয়ের ধার শোধকরতেই তোর বাবার মাইনের অর্ধেক টাকা বেরিয়ে যায়। একটু চেষ্টা কর বাবা তোর পড়ার খরচটা যদি তুই জোগাড়করতে প্যারিস।
আমি – কিন্তু মা আমিতো এখনো চাকরি করিনা আমি কি করে টাকা রোজগার করবো ?
মা – তুই তো কোনোদিনই ক্লাসে দ্বিতীয় হোসনি বরাবরই প্রথম হয়েছিস। তুই তো টিউশন নিতে পারিস , তাতে তোররোজগারও হবে আর অভ্যাসও থাকবে ; দেখনা বাবা তোর পাড়ার বন্ধুদের বলে যদি দু–একটা টিউশন জোগাড়করতে প্যারিস।
ম এর কথা শুনে ভাবলাম এদিকটাতো আমি ভেবে দেখিনি। মুখে মাকে বললাম ঠিক আছে মা আমার এক সহপাঠীবিনয় সামন্ত টিউশন করে ওকে একবার বলে দেখি।
মা – যা একবার তাকে বলে দেখ যদি দুএকটা টিউশন পাস্।
আমি – আমি এখুনি যাচ্ছি মা, দেখি ওর কাছে কোনো টিউশন আছে কিনা।
এই বলে আমি বাড়ি থেকে বের হলাম, একটু এগোতেই আমার স্কুলের অনেক স্যারের সাথে সুনীতি বন্ধ্যোপাধ্যায়।আমি ওনাকে দেখিনি উনিই আমাকে ডাকলেন —এই সুমন কোথায় যাচ্ছিস ?
আমি – অরে স্যার আপনি বলে ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
স্যার – আরে আমি তোর কাছেই যাচ্ছিলাম; তোর তো এখন কোনো কাজ নেই তা বলি কি আমার কিছু ছাত্র–ছাত্রীআছে ওদের বাড়ির লোকেরা আমার পিছনে পরে আছেনা তাদের ছেলে–মেয়েকে পড়াবার জন্যে। কিন্তু স্কুল করেআমার আর সময় হচ্ছেনা যে ওদের পড়াবো। আমাকে পীড়াপীড়ি করছেন যদি আমি না পড়াই তো অন্য ভালোকাউকে ঠিক করে দিতে।
তা আমার মাথায় তোর কথাই এলো কেননা পড়ার ব্যাপারে তুই বরাবরই খুব ভালো আর তোর ধারাবাহিক ভালোনাম্বার, মাধ্যমিকে ৪ খানা লেটার নিযে প্রথম বিভাগে উর্তীন্ন হয়েছিস। ওদের সবাইকে তোর কথা বলতে রাজি হয়েগেলো। তাই আমি তোর বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলাম; তা তুই রাজি তো টিউশন নিতে? দেখ তোর সময় ও কাটবে আরকিছু রোজগারও হবে।
আমি – স্যার আমিও টিউশন খুজছিলাম আর আপনি যখন ঠিক করেছেন আমি করবো।
উনি প্রথমে আমাকে একজনের বাড়ি নিয়ে গেলেন, আমার বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয় ধীরে সুস্থে হেটে গেলে মিনিটদশেক লাগবে। দরজা নক করতে এক মহিলা বেরিয়ে এলেন দেখতে বেশ সুন্দরী একটু গোলগাল চেহারা বয়স মনেহয় ৩০–৩৫এর মধ্যে।আমাদের উনি ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। ওনার ডাকে ওনার স্বামী বসার ঘরে এলেন হাততুলে নমস্কার জানিয়ে বললেন বলুন হঠাৎ এই সকালে আমার বাড়ি।
স্যার – নির্মল বাবু এই আমার ছাত্র আমি এর কথাই আপনাকে বলে ছিলাম খুব ভালো ছাত্র আমার যেমনপড়াশোনায় তেমনি স্বভাব চরিত্রে।
এর নাম সুমন হালদার এই আপনার মেয়েকে পড়াবে। উনি আমার দিকে তাকালেন, আর খুব ভালো করে আপদমস্তক পর্যবেক্ষন করে স্যার কে বললেন – তা ঠিক আছে ওই না হয় পড়াবে তা ওকে কত দিতে হবে সেটা আপনিঠিক করে দিন।
স্যার – সেটা আমি কি করে বলব আপনি নিজে যেটা বিবেচনা করবেন সেটাই দেবেন।
নির্মল বাবু – ঠিক আছে আমি ওকে এখন ১৫০০ দেব একমাস আমার মেয়েকে পড়াক তারপর নয়
স্যার – অরে ঠিক আছে।
নির্মল বাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন – তুমি বিকেলে পড়াতে এসো নিপার মা তোমাকে সব বলেদেবে। বলেস্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন মাস্টার মশাই আমাকে ক্ষমা করুন আমাকে এখন বেরোতে হবে।
উনি চলে গেলেন ওনার স্ত্রী ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি মেয়ে মিষ্টির প্লেট নিয়ে আমাদের সামনে রাখলো সাথেদুটি কাচের গ্লাস জল l
ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন – বাবা মিষ্টি খাও আমি চা করে নিয়ে আসি।
আমি একবার স্যারের দিকে তাকালাম দেখলাম উনি খেতে শুরু করেছেন ওনার দেখাদেখি আমিও শুরু করলাম।একটু পরে মেয়েটি চা নিয়ে টেবিলে রাখলো, পিছনে ভদ্র মহিলা কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে। এসে আমাকে জিজ্ঞেসকরলেন – তোমার নামটা যেন কি ?
আমি – সুমন হালদার।
আমার কথা শেষ হতেই উনি বললেন তুমিকি দীপেন হালদারের ছেলে।
আমি – আপনি আমার বাবাকে চেনেন।
বললেন সামনা সামনি দেখা হয়নি কোনোদিন তবে নিরুর বাবার কাছে শুনেছি অনেকবার।
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি ওনার স্বামী বললেন নিপা আবার উনি বলছেন নিরু ভদ্র মহিলা আমারমুখের দিকে তাকিয়েই বুঝলেন বললেন অরে দুজন কে পড়াতে হবেনা তোমাকে। আমাদের একটাই মেয়ে ওর নামওর ঠাকুরদা রেখেছিলেন নিরুপমা আমি ওকে নিরু বলেই ডাকি আর ওর বাবা ডাকেন নিপা বলে।
এখন ক্লাস নাইন হলো মেয়েটি একটু খামখেয়ালি আর খুবই সহজ–সরল। তুমি খুব ভালো ছেলে তোমার বাবারমতো, শুনেছি উনিও খুবই ভালো আর সৎ মানুষ। আমাকে তুমি কাকিমা বলে ডেকো আমি তোমার মলিনা কাকিমা।নিরু তো স্কুলে গেছে আস্তে আস্তে চারটে বাজবে তুমি আজি ৬টা নাগাদ চলে এসl
আমি মাথা নেড়ে বললাম ঠিক আছে কাকিমা আমি ঠিক ৬টাতেই আসব।
ওনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাবছিলাম আমার বাবার নাম এনারাও জানেন আমাকে মা বলেন তোর বাবার অর্থ নেইকিন্তু সৎ মানুষ হিসেবে ওনাকে সবাই চেনেন ও শ্রদ্ধা করেন অনেকেই। ইটা ভেবে আমার ভীষণ গর্ব হচ্ছে।
স্যারের সাথে আর একটি বাড়ি এলাম বেশ কিছুটা এসে উনি একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালেন সামনে একজনদারোয়ান বসে আছে কাছে গিয়ে তাকে বললেন সুরজিৎ বাবু আছেন।
কথাটা শুনে বাড়ির সদর দরজাতে নক করেতেই একজন মাঝ বয়েসী লোক, সম্ভবত কাজের লোক, দরজা খুলেবেরিয়ে এল। আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল আপনাদের নাম কি বলবো। স্যার বলেদিলেন গিয়ে বলো সুনীতিমাস্টার এসেছেন। লোকটি চলে গেল. একটু পরে হাত জোর করে এক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন অরে মাস্টার মশাইআসুন আসুন বলে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন।
No comments:
Post a Comment